পাবলিক রিলেশন কি?

পাবলিক রিলেশন কি?

সফল মানুষেরা সামাজিক কিংবা পেশাগত জীবন সব ক্ষেত্রেই পিআর (পাবলিক রিলেশন/ জনসংযোগ) ব্যবস্থাপনার নানা কৌশল ব্যবহার করেন। জীবনের প্রতিটিদিনই পিআর ব্যবস্থাপনা দরকার এবং আপনি কোনো না কোনো উপায়ে তা করেও আসছেন।

আপনি শিক্ষার্থী হলে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পিআর প্রয়োজন। প্রেম বা বিয়ের জন্য লাগবে পিআর, ভালো চাকরির জন্য, ভালো ব্যবসায়ের জন্য, বড় নেতা হওয়ার জন্য, নোবেল পুরষ্কার বা সেলাই মেশিন যাই আপনি চান না কেন তা হাসিল করতে পিআর আপনার লাগবেই। পিআর বোঝেন বা না বোঝেন আপনি প্রতিদিনই নানাভাবে পিআর করে আসছেন।

প্রশ্ন হলো, কীভাবে করছেন জনসংযোগের (পিআর)?

ধরা যাক, আপনি একজন বিবাহযোগ্য পাত্র। একজন মেয়ের সঙ্গে আপনার বিয়ের আলোচনা চলছে। এবার আপনার পরিবারের লোকজন মেয়ের প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে কিংবা তাঁর অফিসের কলিগদের কাছে থেকে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এমন ঘটনা নতুন কিছু না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে। পাত্র পক্ষের লোকজন এমন মানুষের কাছে থেকে খোঁজ নেন যাদের তাঁরা হয়তো চেনেনই না। এই অপরিচিত পাত্র পক্ষ প্রতিবেশী কিংবা মেয়ের অফিসের কলিগদের কথা বিশ্বাস করে বিয়ের সিন্ধান্ত নেন।

পাত্রি পক্ষের বেলায়ও একই ঘটনা ঘটে। পাত্র পক্ষ কিংবা পাত্রি পক্ষ পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের থেকে অপরিচিত লোকদেরকেই বেশি বিশ্বাস করেন। এটাই হলো ‘তৃতীয় পক্ষ-কর্তৃপক্ষ’ যার ব্যবহারিক নাম পাবলিক রিলেশন (পিআর) যা বাংলায় জনসংযোগ হিসেবে পরিচিত। এডওয়ার্ড বার্নেসকে বলা হয় ফাদার অব পিআর। ১৯২০ সালে তিনিই প্রথম  ব্যাখ্যা করেন- ‘তৃতীয় পক্ষ-কর্তৃপক্ষ’ কি?

উপরের উদাহরণটি ব্যক্তিগত জীবন থেকে এবার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মেলান। ধরা যাক, আপনি আপনার পরিচিত একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে কোন ব্র্যান্ডের সাবান কিনবেন তাই ভাবছেন। এই পরিস্থতিতে সিন্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি আপনার পরিচিত দোকানদারের চেয়ে অপরিচিত কোনো ক্রেতার কথাই বেশি বিশ্বাস করেন।

গবেষণা বলছে ৭০ শতাংশ লোক অপরিচিত মানুষের কথা বিশ্বাস করেন। অন্য দিকে এডলম্যান পরিচালিত এক জরিপে তিনি বলেছেন, ৫৫ শতাংশ মানুষ নিজের পছন্দের ব্যান্ড কিনতে পরিচিতদের উদ্বুদ্ধ করেন। এই ৭০ শতাংশ এবং ৫৫ শতাংশ লোককে আপনি আপনার পণ্যের প্রমোটার বানাতে পারেন দক্ষ হাতে পিআর ব্যবস্থপনার মাধ্যমে। 

আমেরিকার পাবলিক রিলেশনস সোসাইটি বলছে, ‘জনসংযোগ একটি কৌশলগত যোগাযোগ পদ্ধতি যা কোনো প্রতিষ্ঠান এবং তার ক্রেতাদের মধ্যে পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক তৈরি করে।’

আমার কাছে পিআর হলো, একটি কোনো একটি ব্র্যান্ডের জন্য বিক্রয়যোগ্য গল্পবলার একটি কৌশলগত পদ্ধতি। এই একবিংশ শতকে একটি ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য গল্প ক্রেতার সামনে উস্থাপন না করে কোনোভাবেই ব্র্যান্ড পজিশনিং করতে পারবেন না। 

গত ৬০/৭০ বছরের মার্কেটিংয়ে নানা ধরনের বিবর্তন ঘটেছে। মার্কেটিংয়ের তিনটি বড় নীতির আর্বিভাব হয় এই সময়ই। কোম্পানিগুলো প্রথমে ছিল পণ্যকেন্দ্রীক, তার পরে ক্রেতাকেন্দ্রীক এবং সবশেষে ক্রেতা থেকে মানবজাতি কেন্দ্রীকতার দিকে ঝুঁকেছে। আরো সহজ করে বললে, ১৯৫০-১৯৬০ সাল পর্যন্ত প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট, ১৯৭০-১৯৮০ কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট এবং ১৯৯০-২০০০ ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।

কর্পোরেট দুনিয়া এখন ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছে। তবে যারা ছোট ছোট ব্যবসায় করছেন তারাই কেবল ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন না। ২০২২ সালে এসে আপনি যদি শুধু পণ্যকেন্দ্রীক বা কাস্টমারকেন্দ্রীক প্রমোশনাল প্ল্যান করেন আর সেই প্ল্যানে আপনি যদি সফল না হন তবে আপনি হয়তো ভাগ্যের দোষ দেবেন? তবে প্রমোশন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে কোন সময়ে কোন কথা বলছেন তার ওপর।  

ভোক্তা তথা কাস্টমারদের সাহায্য করুন যাতে তাঁরা আপনাকে সহজে খুঁজে পায়। নিজেকে সব সময় ভোক্তার নাগালের মধ্যে রাখুন, আর ভালো খবর ছড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন, আপনার ছড়িয়ে  দেওয়া ভালো খবর যেন কেবলই ওয়াজ-নসিহতে পরিণত না হয়। এবং এই বিষয়টি নিশ্চিত করাই পাবলিক রিলেশনের কাজ। 

টাকা খরচ করে অথবা টাকা না খরচ করে পিআর কীভাবে করবেন তা জানতে পড়ুন- ‘কীভাবে করবেন পাবলিক রিলেশন?