কিভাবে করবেন পাবলিক রিলেশন?

[১ যুগ ধরে পাবলিক রিলেশন প্রফেশনে জড়িত। এখন পর্যন্ত ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোট ১৬ হাজারের বেশি নিউজ কাভার করেছি। প্রতিনিয়ত ক্লায়েন্টদের জন্য আমাকে পিআর প্ল্যান করতে হয়। প্রতিমাসেই কাউকে না কাউকে ব্যক্তিগত পিআর প্ল্যান করতে সাহায্য করতে হয়। তাই আজ ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু পিআর আইডিয়া শেয়ার করছি। ভালো লাগলে আপনিও প্রয়োগ করতে পারেন।]

২০০৬ সালে অনার্স পড়তে প্রথম ঢাকা আসি আমি। এসেই বুঝলাম কেবল পড়শোনা করলেই হবে না। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য আমাকে কিছু আয়ও করতে হবে। দেরি না করে খাতা নিয়ে মামাদের তালিকা করতে বসলাম। কারণ, শুনেছিলাম মামা না থাকলে চাকরি হয় না। অনেক কষ্টে দুজন মামার নাম তালিকাভুক্ত করতে পারলাম। একজন মায়ের ভাই, অন্যজন মামির ভাই। প্রথম জনের কাছে চাকরি না পেলেও বাসায় থাকার ব্যবস্থা হল। মামার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা না হলে ঢাকায় টিকে থাকা আমার জন্য কঠিন হতো। আর এক মামা একটি সার্ভে প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ব্যবস্থা করে দিলেন। প্রথম পিআর-এ সফল হলাম।

সার্ভে প্রতিষ্ঠানে সব সময় কাজ থাকে না। তাই আবার খাতা নিয়ে বসলাম। আর কোনো মামা আছেন নাকি। মামা নেই। আচ্ছা মামার বন্ধু আছে কারা কারা, বড় ভাই, বড় ভাইয়ের বন্ধু, তার বন্ধু, আত্মীয়, তাদের আত্মীয়, এলাকার পরিচিতজন বা এলাকার সফল মানুষ কারা, নিজের বন্ধুদের মধ্যে কারা কারা চাকরি করে তাদের তালিকাও বাদ দিলাম না। এরপরে এদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলাম। অনেকেই চাকরি দিয়েছেন। এভাবে চাকরি পাওয়া যায়। এই এক আইডিয়াতেই ১২ বছর ধরে ব্যবসা করছি কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই।

এই ডায়েরি লেখাটাকে বলে কানেকশন ম্যাপিং। এর পরের ধাপ কানেকটিং এবং সব শেষ নেটওয়ার্কিং। এটি হলো বিনা খরচে পিআর করার একটি পদ্ধতি। এই কৌশল ব্যক্তিগত কাজে লাগানোর পাশাপাশি এই কৌশল পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

কানেক্ট না করতে পারলে আপনি কাউকে কনভিন্স করতে পারবেন না। লোকে প্রথমেই দরকারি মানুষকে/কাস্টমারকে কনভিন্স করতে চায়। আসল সমস্যটা ওখানেই। হাতুড়ে ডাক্তারও এই কাজটি করে বলেই রোগী পায়না। রোগ না ধরেই ঔষধ দেয়। আগে রোগ ধরতে হয়, তার পরে না ঔষধ দিতে হয়। তাই প্রথমেই রাঘব বোয়াল নয়। একেবারে চুনোপুটি থেকে জনসংযোগ শুরু করুন। একবার কানেক্ট করতে পারলে লোকে আপনা আপনিই কনভিন্স হয়ে যায়।

কানেক্ট করার দুটি ধাপ। প্রথম ধাপ- আপনার ভেতরে। কাস্টমারকে সম্মান করতে হবে মন থেকে। কাস্টমার যেন কোনোভাবেই না ঠকে। সাধ্যের মধ্যে কাস্টমারকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। যেমন, ভালো পণ্য বিক্রয় করা, বাতিল পণ্য বিক্রয়ের চিন্তা না করা, পছন্দ না হলে ফেরত নেওয়া, পণ্য পৌঁছাতে দেরি হলে দুঃখ প্রকাশ করা, ডেলিভারির পর ক্রেতার এক্সপেরিয়েন্স জানতে চাওয়া, বিশেষ উৎসবে কাস্টমারকে উপহার প্রদান করা, কাস্টমারের যেকোনো অভিযোগ সানন্দে গ্রহণ করা (আপনি জানেন তো আধুনিক ব্যবসায়ে কাস্টমারের অভিযোগকে আর্শিবাদ মনে করা হয়। কারণ-

১. অভিযোগটি জানার ফলে আপনি আপনার সেবার মান বাড়াতে পারবেন।

২. অভিযোগকারী ক্রেতাকে কানেক্ট করতে পারলে সে হতে পারে আপনার সারাজীবনের  ক্রেতা)। ক্রেতাকে কখনোই সরাসরি কনভিন্স বা সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে না। চেষ্টা করবেন আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা দিতে।  

দ্বিতীয় ধাপ- আপনার বাইরে। ক্রেতাকে যে আপনি শুধু টাকা আয়ের রাস্তা মনে করেন না, সেটাও তো তাঁকে বোঝাতে হবে। কীভাবে তাঁকে এই বিষয়টি বোঝাবেন? প্রথমে আপনাকে ক্রেতার ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। এরপর তাদের এসএম, ফোনকল, ই-মেইল, ফেসবুক, ওয়েবসাইটের মাধেমে কানেক্ট করার চেষ্টা করুন। কিছু স্যোশাল উদ্যোগও নিতে পারেন। যেমন, আপনার নিজের ব্লগসহ নানা আপনার ব্যবসায় সম্পর্কে ব্লগ লিখুন। অনলাইন, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং রেডিও স্টেশনে আপনান উদ্যোগ সম্পর্কে লেখা বা খবর পাঠান।

প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে পত্রিকার যে পাতায় আপনার প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের খবর ছাপা হয় সেসব পাতায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও যে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে হবে-নো কনভিন্স। এর পরের ধাপে যে কথাগুলো ভেবেছেন সেগুলো এবং নতুন পণ্যের খবর আলাদা আলাদাভাবে গুরুত্ব বুঝে বিভিন্ন সময় সেই সাংবাদিকদের লিখে পাঠান। অবশ্যই তাঁরা ছাপাবেন/টিভিতে প্রচার করবেন। দয়া করে এক প্রেস রিলিজে আপনার সব কথা লিখবেন না। এতে সাংবাদিকেরা বিভ্রান্ত হয়ে যান, তখন পুরো প্রেস রিলিজটাই যায় ময়লার ঝুড়িতে।

###

কিভাবে প্রেস রিলিজ লিখতে হয় তা জানতে হলে পড়ুন: প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখার কৌশল’ লেখাটি।

1 thought on “কিভাবে করবেন পাবলিক রিলেশন?”

  1. Pingback: পাবলিক রিলেশন কি? – Story Teller

Comments are closed.